SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বিজ্ঞান - বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ | NCTB BOOK

ছত্রাক

ছত্রাক ক্লোরোফিলবিহীন অসবুজ জীব। তোমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, ক্লোরোফিল একটি অতি প্ৰয়োজনীয় জৈব অণু যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং উদ্ভিদকে সূর্যালোক থেকে শক্তি সংগ্রহে সাহায্য করে। এক সময়ে ছত্রাককে অসবুজ উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এগুলোকে উদ্ভিদ থেকে আলাদা বিবেচনা করা হয়। ক্লোরোফিলের অভাবে এগুলো সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না। তাই অন্য জীব বা জীবের অংশবিশেষের ওপর নির্ভর করে খাদ্যগ্রহণ করে (পরভোজী বৈশিষ্ট্য) অথবা মৃতজীবের অবশিষ্ট জৈববস্তু থেকে সেগুলো পুষ্টি গ্রহণ করে (মৃতজীবী বৈশিষ্ট্য) । পরভোজী ছত্রাক বাসি ও পচা খাদ্যদ্রব্য, ফলমূল, শাকসবজি, ভেঁজা রুটি বা চামড়া, গোবর ইত্যাদিতে জন্মায়। মৃতভোজী ছত্রাক মৃত জীবদেহে বা জৈব পদার্থসমৃদ্ধ মাটিতে জন্মায়। 

ছত্রাকে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। এগুলোর কোষপ্রাচীরে কাইটিন নামের বিশেষ উপাদান থাকে যা সেগুলোকে বাইরের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে বা অন্য জীবাণুর আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।

ছত্রাকের উপকারিতা

ছত্রাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অণুজীব। পেনিসিলিন (Penicillin) নামের অ্যান্টিবায়োটিকের নাম হয়তো অনেকেই শুনে থাকবে। অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে এমন ওষুধ যা সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নামের একজন বিজ্ঞানী পৃথিবীর প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন পেনিসিলিয়াম (Penicillium) নামের এক ধরনের ছত্রাক থেকে।

পাঁউরুটি তৈরিতে ঈস্ট (Yeast) নামের ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে ঈস্ট দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং এর ফলে যে শ্বাসক্রিয়া হয়, তার থেকে সৃষ্ট প্রচুর পরিমাণের কার্বন ডাইঅক্সাইডের বুদবুদ আটার খামিরে ভরে যায়, তাই খামিরের আয়তন বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ খামির ফুলে যায়। তাই আমরা যে পাউরুটি খাই তা যথেষ্ট নরম হয়। ঈস্ট ভিটামিনসমৃদ্ধ বলে ট্যাবলেট হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এগারিকাস (Agaricus) নামক এক ধরনের মাশরুম মজাদার খাদ্য বলে বিবেচিত। বর্তমানে আমাদের দেশসহ বহু দেশে এর চাষ করা হয়। আবর্জনা পচিয়ে মাটিতে মিশিয়ে জৈব সার তৈরিতেও ছত্রাকের বড় ভূমিকা রয়েছে।

ছত্রাকের অপকারিতা

অনেক রকমের ছত্রাক রয়েছে যেগুলো মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদের অনেক রোগের জন্য দায়ী। দাদ, ছুলি (ছোলম) ও মানুষের শ্বাসনালির সংক্রমণে ছত্রাকের ভূমিকা থাকে। ছত্রাক আলু, পাট, আখ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ ফসলের রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া এ ছত্রাক সহজেই কাঠ ও বেত বা বাঁশের আসবাবপত্র পচিয়ে ফেলে।

ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধকরণ

ছত্রাকজনিত রোগ খুবই ছোঁয়াচে। অর্থাৎ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে এ রোগ সংক্রমিত হতে পারে। এসব রোগ থেকে নিরাপদ থাকতে যা করা দরকার তা হলো:

  • ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র (কাপড় চোপড়, চিরুনি, টুপি, স্যান্ডেল) ব্যবহার না করা।
  • ছত্রাকজনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কম আসা।
  • ছত্রাক আক্রান্ত উদ্ভিদে ওষুধ ছিটানো বা উদ্ভিদ তুলে পুড়িয়ে ফেলা।

শৈবাল

ক্লোরোফিলযুক্ত ও স্ব-ভোজী উদ্ভিদসদৃশ জীব হচ্ছে শৈবাল। শৈবালকে পুরোপুরি উদ্ভিদ হিসেবে গণ্য করা যায় না, কারণ, সেগুলোর মূল, কাণ্ড ইত্যাদি পুরোপুরি উদ্ভিদের মতো নয়। এরা মাটি, পানি ও অন্য গাছের উপর জন্মায়। সবুজ ও লাল, বাদামি ইত্যাদি রঙের শৈবাল দেখা যায়। আকার আকৃতির দিক থেকে শৈবালের বৈচিত্র্য অবাক করার মতো। কেবল অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্য ছাড়া দেখা যায় না এমন শৈবাল যেমন রয়েছে। এগুলোকে বলা হয় Microalgae বা ক্ষুদ্র শৈবাল। অপরদিকে অনেক বৃহৎ শৈবাল রয়েছে যেগুলো সমুদ্রে জন্মায় এবং গড়ে ১০০ ফুটের মতো লম্বা হয়। এগুলোকে কেল্প (Kelp) বলা হয়।

দৈত্যাকার কেল্প যা সমুদ্রে জন্মায়।
কেবল অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে দেখা যায় এমন ক্ষুদ্র শৈবাল।

শৈবালের গঠন: শৈবাল এককোষী কিংবা বহুকোষী হতে পারে। অনেকগুলো কোষ মিলে এগুলো শিকলের মতো গঠন নিতে পারে। প্রায় উদ্ভিদের মতো দেখতে অনেক বড় শৈবালও রয়েছে। শৈবালের কোষে কোষপ্রাচীর থাকে। এছাড়া এগুলোর নিউক্লিয়াস সুগঠিত। অর্থাৎ এগুলোর নিউক্লিয়ার পর্দা দ্বারা নিউক্লিয়াসটি কোষের সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথক থাকে। শৈবালে ক্লোরোপ্লাস্ট এবং মাইটোকন্ড্রিয়া অঙ্গাণুও থাকে।

শৈবালের উপকারিতা: শৈবাল অত্যন্ত উপকারী অণুজীব। আইসক্রিম তৈরিতে সামুদ্রিক শৈবালজাত উপাদান অ্যালজিন ব্যবহৃত হয়। সামুদ্রিক শৈবাল আয়োডিন ও পটাশিয়ামের একটি ভালো উৎস। মাছ চাষে শৈবাল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্পিরুলিনা (Spirulina) নামক শৈবাল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়, যা প্রেটিনসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ।

শৈবালের অপকারিতা: মানুষ ও উদ্ভিদের নানা রোগ সৃষ্টিতে শৈবাল দায়ী। যেমন এক ধরনের শৈবাল চা- পাতার রেড রাস্ট রোগ সৃষ্টি করে। জলাশয়ে শৈবালের আধিক্য দেখা দিলে জলজ প্রাণী ও মাছ অক্সিজেনের অভাবে মারা যেতে পারে। শৈবালের বিষ দ্বারা বিষাক্ত সামুদ্রিক খাবার খেয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

অ্যামিবা

প্রোটিস্টা রাজ্যের সদস্য অ্যামিবা এককোষী প্রাণী। এগুলোর দেহ ক্ষুদ্রাকার। অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া এগুলোকে দেখা যায় না। আমিবা প্রয়োজনে দেহের আকার পরিবর্তন করে থাকে। এগুলোর দেহ থেকে আঙুলের মতো তৈরি অভিক্ষেপকে ক্ষণপদ বলে। এর সাহায্যে অ্যামিবা খাদ্য গ্রহণ ও চলাচল করে। এদের সারা দেহ একটি পাতলা ও স্বচ্ছ পর্দা দ্বারা ঘেরা থাকে, একে প্লাজমালেমা বলা হয়। অ্যামিবা পানিতে, স্যাঁতসেঁতে মাটিতে, পুকুরের তলার পচা জৈব আবর্জনার মধ্যে জন্মে।

একটি অ্যামিবা। ছবিতে ক্ষণপদ ও কোষের ভেতরের খাদ্য গহ্বর বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

এন্টামিবা

এন্টামিবা (Entamoeba) প্রোটিস্টা রাজ্যভুক্ত আরেক ধরনের এককোষী জীব। খালি চোখে এগুলোকে দেখা যায় না। এগুলোর দেহের কোনো নির্দিষ্ট আকৃতি নেই, কারণ এরাও সর্বদাই অ্যামিবার মতো আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করতে থাকে। এগুলোর দেহ স্বচ্ছ জেলির মতো। তবে কখনো কখনো প্রতিকূল পরিবেশে এগুলো গোলাকার শক্ত আবরণে নিজেদের দেহ ঢেকে ফেলে। এ অবস্থায় একে সিস্ট (Cyst) বলে ।

আমাদের অন্ত্রে পাওয়া এ্যান্টামিবা। এ্যামিবার মতো এদেরও ক্ষণপদ ও খাদ্যগহবর থাকে। তবে সেগুলোর ভেতরে মানুষের অস্ত্র থেকে ভক্ষণ করা রক্তকণিকাও পাওয়া যায়।

আমিবা পরজীবী হিসেবে মানুষ, বানরজাতীয় প্রাণী, বিড়াল, কুকুর, শূকর ও ইঁদুরের বৃহদন্ত্র বাস করে। মূলত অ্যামিবার সঙ্গে এন্টামিবার মূল পার্থক্য হচ্ছে, সেগুলোর এই আবাস। অ্যামিবা স্বাদু পানিতে মুক্ত জীব হিসেবে অবস্থান করে। কিন্তু এন্টামিবা অন্য জীবের ভেতর আন্ত্রিক পরজবী হিসেবে বাস করে। এগুলো মানুষের এক ধরনের আমাশয় রোগের জন্য দায়ী।

এ্যান্টামিবা কোষ বিভাজন ও অণুবীজ (স্পোর) সৃষ্টির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। যে পদ্ধতিতে একটি স্পোর বা অণুবীজ বহুখণ্ডে বিভাজিত হয়, তাকে স্পোরুলেশন বলে। এন্টামিবা কোষের প্রোটোপ্লাজম বহুখণ্ডে বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণুবীজ বা স্পোর গঠন করে।

Content added By
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.